Tuesday, June 15, 2010

14 june in 1971

  •   ১৯৭১-এ এদেশের মানুষকে ধ্বংস করার জন্যে নিয়োজিত পাক সরকারের কুখ্যাত গভর্নর টিক্কা খান এ সময় পশ্চিম পাকিস্তানে যান গভর্নরদের সম্মেলনে। সেখানে ১৪ জুন টিক্কা খান দেশের অবস্থা ও শান্তিকমিটির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এটা মোটেও রাজনৈতিক সংগঠন নয়। শান্তিকমিটির সাচ্চা পাকিস্তানিরা দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে দেশ বাঁচানোর জন্যে আমাকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।’ শান্তিকমিটির সদস্য আর পাক- বাহিনীর সম্পর্ক কত গভীর ছিল তা এ থেকে পরিষ্কার ধারণা করা যায়।
     
  • ১৪ জুন জুলফিকার আলী ভুট্টো দেখা করেন ইয়াহিয়ার সঙ্গে। তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের মধ্যে নিজের অবস্থা সুসংহত করার জন্যে পূর্ব-পাকিস্তানে প্রতিনিধি পাঠাবার সিদ্ধান্ত নেন। একই দিনে ঘাতকদের অন্যতম দালাল খান এ সবুর প্ররোচিত করে পাকিস্তানিদের ভারতে নিয়ে গিয়ে ফেরত না দেয়ার তীব্র নিন্দা করেন।
     
  • পাকিস্তানি বাহিনীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তখন যে সব সাংবাদিক যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশনে নিয়োজিত ছিলো, তাদের মধ্যে একজন ছিলো এ্যান'নী ম্যাসকারেনহাস। পাক বাহিনী ও ঘাতকদের বিরুদ্ধাচরণ করায় জীবন নিয়ে পালাতে হয় ‘মর্নিং নিউজ-এর সহকারী সম্পাদক এ.ই. ম্যাসকারেনহাসকে পাকিস্তান থেকে। ধর্মের নামে পাক বাহিনী এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্রতা স্তিমিত করার অপপ্রয়াস চালায়।
    এইদিনে অ্যাডভোকেট আব্দুল হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শান্তিকমিটির সভায় দেশের শুত্রুদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) ধ্বংসের জন্যে শেষ রক্তবিন্দু দেয়ার প্রতিজ্ঞা নেয়া হয়। এতে বক্তব্য রাখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আজমল আলী চৌধুরী, জামাত নেতা শামসুল হক, অ্যাডভোকেট জালালুদ্দিন প্রমুখ। শান্তিকমিটির তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় খান বাহাদুর আফজাল খাঁ’র নেতৃত্বে পিরোজপুরে।
     
  • এই দিনে মুক্তিযুদ্ধকে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে নিন্দা করে মুন্সিগঞ্জ শান্তিকমিটির নেতা মুহম্মদ আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী। জামালপুর দালালরা সংগঠিত হয় অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ, কবিরাজ মক্তব হোসেন, এসএম ইউসুফ অধ্যাপক আব্দুল গণি, ডা. তানিরউদ্দীন আহমদ, আলম, আব্দুল বারী প্রমুখের নেতৃত্বে।
    ঝালকাঠি আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি ফজল হক দলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে এদিন। প্রাদেশিক সদস্য এসবি জামান সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ সফর করে বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা জনগণকে প্রচণ্ড দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে ফেলেছে।’
    আর এদেশে নিধনযজ্ঞের সেনাপতি লেঃ জেনারেল নিয়াজী উত্তরাঞ্চল সফরের সময় কঠোর হাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী তথা মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করার নির্দেশ দেন।
 
  • পাক সেনাদের একটি দল কুমিল্লা থেকে নয়া বাজার হয়ে চৌদ্দগ্রামের দিকে অগ্রসর হলে মুক্তিযোদ্ধারা নয়া বাজারের কাছে তাদের এ্যামবুশ করে। এ অভিযানে পাক সেনাদের ৩০ জন সৈন্য হতাহত হয় এবং তাদের অগ্রগতি ব্যাহত হয় ও তারা পিছু হটে।
  • মুক্তিবাহিনীর ১৬ জন যোদ্ধার একটি দল কুমিল্লার বুড়িচং থানার উপর আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে পাকসেনাদের ৮ জন নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন আহত ও একজন নিখোঁজ হয়। এতে বুড়িচং থানা শত্রুমুক্ত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ঢাকা, কুমিল্লা যাবার গোপন পথ নিরাপদ হয়।
  • গোপালগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর চলবল ঘাঁটির ওপর পাক হানাদার বাহিনী মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও টেকেরহাট এই তিনদিক দিয়ে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে পাক সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের নিকটবর্তী রামশীল গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং এর ভিতর দিয়ে গৌরনদী থানার বাসাইল গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। পথে বান্দাবাড়ী খালের কাছে হেমায়েত বাহিনীর সাথে পাক সেনাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। দীর্ঘ যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী পিছু হটে। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মকবুল শহীদ হন এবং হেমায়েত আহত হন। অপরদিকে পাকবাহিনীর ৫০-এর অধিক সৈন্য নিহত হয় এবং ১৮ জন সৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। এ যুদ্ধের পর হেমায়েতবাহিনী কোদালধোয়া গ্রামে তাঁদের ঘাঁটি স্থানান্তর করে।
  • পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল টিক্কা খান করাচীতে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের ফলে উদ্ভুত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকার সম্পূর্ণ তৈরী।‘ তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্ন সমাধানের আগে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখতে হবে। প্রদেশের পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত এবং দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্তে কিছু পুল উড়িয়ে দিয়েছে এবং ধ্বংসাত্মক কাজ করছে।
    তিনি শান্তি কমিটির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এটা মোটেও রাজনৈতিক সংগঠন নয়। শান্তি কমিটির সাচ্চা পাকিস্তানিরা দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে দেশ বাঁচানোর জন্যে আমাকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।‘

  • ঢাকা পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের ২১০টি রাস্তার নাম পাল্টে দিয়ে ইসলামী নাম রাখে। লালমোহন পোদ্দার রোডের নাম হয় আবদুর করিম গজনবী রোড, হরিচরণ রোডের নাম হয় মোহাম্মদ বিন কাসেম রোড। এভাবে শাঁখারী বাজার হয়ে যায় গুলবদন, কিষাণ ব্যানার্জী হয় আলীবর্দী, নবীন চাঁদ হয় বখতিয়ার খিলজী আর কালীচরণ রোড হয় গাজী সালাউদ্দিন রোড।
  • জাতীয় পরিষদের সাবেক নেতা খান আবদুস সবুর ঢাকায় বলেন, বাংলাদেশ নামের প্রতিশ্রুত স্বর্গ এখন নরক যন্ত্রণা বৈ কিছু না। প্রতিশ্রুত স্বর্গ প্রলোভনে সীমান্ত পার হয়ে যাওয়া খাঁটি পাকিস্তানিরা এখন নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে।
  • প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এস.বি. জামান পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণকে সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।