Wednesday, June 16, 2010

16 june in 1971


  • ১৯৭১এর রেডিও পাকিস্তান পরিণত হয়েছিল পাক বাহিনী ও তাদের পা চাটা দালাল এদেশীয় ঘাতকদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রচারযন্ত্রে। ঘাতকদের নির্যাতনের কাহিনী গোপন করে রেডিও পাকিস্তান একচেটিয়া প্রচার করতে থাকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা। অন্যান্য দিনের মতো ১৬ জুনও রেডিও পাকিস্তান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীদের ঢালাওভাবে আখ্যা দেয়া হয় দুষ্কৃতকারী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, লুটতরাজকারী ও দেশের শত্রু হিসেবে। 

  • অনেক দেশ কূটনৈতিক পর্যায়ে এমন ভূমিকা রাখে যা ঘাতক পাক বাহিনীকেই প্রকারান্তরে সহায়তা করে। অনেকেই একে ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলে পাক সেনাদের গণহত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পথকে উস্কে দেয়। ১৬ জুন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আদম মালিক বলেন, ‘পাকিস্তানে যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এতে নাক গলানো আমাদের ঠিক হবে না।’

  • ১৬ জুন কেন্দ্রীয় শান্তিকমিটি নির্দেশ দেয় ১৮ জুনে জুমুয়ার নামাযে পাকিস্তানের অখণ্ডতা, ঐক্য যাতে সংহত হয় এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা (মুক্তিযোদ্ধারা) যাতে ধ্বংস হয় সে জন্যে বিশেষ মুনাজাত করার।

  • পাক সেনাদের সঙ্গে মিলে তথাকথিত শান্তিকমিটি ও ঘাতক রাজাকার-আলবাদর বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন অব্যাহত রাখে। ১৬ জুন আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে বরিশালের মেহেদীগঞ্জ হাই স্কুল প্রাঙ্গণের সভায় সেনাবাহিনীর উদ্ধার করা শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) খতম করার নির্দেশ দেয়া হয়। বরিশাল শান্তিকমিটিতে নেতৃত্বে দেয় লকিতুল্লাহ, ডক্টর মোশাররফ হোসেন, মাওলানা আব্দুল মান্নান (ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা) তোফাজ্জল হোসেন নিয়াজী। এদের জন্যে বরিশালবাসী নিগৃহীত হয় চরমভাবে।

  • তথাকথিত শান্তিকমিটির ঘাতকরা ত্রাসের রাজত্ব কায়িম করে টঙ্গীবাড়ী, পিরোজপুরে। মহকুমা প্রেসিডেন্ট খান বাহাদুর আফজাল খান, সেক্রেটারি এ সাত্তার, অ্যাডভোকেট এ মান্নান, আব্দুল বারী, আব্দুল গনির অত্যাচারে সবসময় তটস্থ থাকতো পিরোজপুরের মানুষ। আনাড়ীপাড়ার সভায় আফজাল খান দুষ্কৃতকারী ও দেশদ্রোহীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়।

  • আর ১৬ জুন লে. জে. নিয়াজী বি-বাড়িয়াসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সফর করে নির্দেশ দেন কঠোর হাতে দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) উচ্ছেদ করার। ফলে এসব অঞ্চলে অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়তে থাকে।


  • চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর চাঁদগাজী ঘাঁটির ওপর পাকসেনারা তীব্র আক্রমণ চালায়। ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সংঘর্ষে পাকিস্তানীদের ৫০ জন সৈন্য নিহত হয়।
  • কুমিল্লার রাজাপুর রেলস্টেশন ঘাঁটি থেকে টহল দিতে আসা পাকসেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন যোদ্ধা এ্যামবুশ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৮ জন সৈন্য নিহত ও একজন আহত হয়। সংঘর্ষ শেষে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, টেলিফোন সেট ও অন্যান্য জিনিস মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
  • মুক্তিযোদ্ধাদের কসবা অবস্থান থেকে একটি ছোট দল বাগবাড়ী নামক স্থানে পাকবাহিনীর একটি টহল দলকে এ্যামবুশ করে। এ অভিযানে পাকবাহিনীর ১০ জন সেনা নিহত ও ৫ জন আহত হয়।
  • গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের কোদালধোয়া ঘাঁটির ওপর পাকবাহিনী চারটি স্পিডবোটে করে আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী তাদের প্রতিরোধ করলে দু‘পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির মুখে পাক সেনারা পয়সারহাট থেকে আট মাইল দূরে পালায়। এ যুদ্ধে পাক সেনাদের ৯ জন সৈন্য নিহত হয়।
  • ঝালকাঠির বৈশাইল থানা এলাকায় হানাদার পাক সেনারা স্থানীয় দালালদের সহায়তায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। যশোরের বেনাপোল পাকবাহিনীর ঘাঁটির ওপর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনী প্রচুর ক্ষতির শিকার হয়।
  • ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্য সভায় বলেন, আমরা অবশ্যই বাংলাদেশ প্রশ্নের রাজনৈতিক মীমাংসা চাই, তবে বাংলাদেশের কবর রচনা করার কিংবা গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা লড়াই করছে তাদের তা থেকে নিষ্ক্রিয় করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। ভারত সে ধরনের মীমাংসার আশাও করে না। আমরা শরণার্থীদের সীমান্তের ওপারে বর্বরতার মুখে ঠেলে দিতে পারি না, যেখান থেকে প্রাণভয়ে তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করে আমাদের দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
  • কানাডার অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী মিজেল শার্প তাঁর দেশের কমন্স সভায় বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের উদ্ভুত পরিস্থিতির রাজনৈতিক মীমাংসা ছাড়া শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আর এই রাজনৈতিক মীমাংসার একমাত্র উপায় হচ্ছে পাকিস্তান বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
  • পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী রাওয়ালপিন্ডিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে
  •