Wednesday, June 16, 2010

17 june in1971

  • টাঙ্গাইলের বাশাইল থানার পশ্চিমে কামুটিয়া নর্থখোলা খেয়াপারে পাকবাহিনীর সাথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৫ জন সৈন্য নিহত হয়।
 
  • পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি ও মর্টার সহযোগে চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর চাঁদগাজী ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানীদের এ ব্যাপক হামলা ক্যাপ্টেন অলি, ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা, ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান তাঁদের নিজ নিজ বাহিনী নিয়ে সার্থকতার সাথে মোকাবিলা করেন। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কিছু ক্ষতি হলেও পাকবাহিনীর পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং পাকবাহিনীর ৪৫ জন সৈন্য নিহত হয়।
 
  • বেলোনিয়ায় মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটির ওপর পাকবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ চালায়। প্রথম অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে বিমান বাহিনীর সহায়তায় পাকসেনারা আক্রমণ অব্যাহত রাখলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে চিতলিয়ায় চলে আসে এবং সেখানে অবস্থান নেয়।

  • দিনাজপুর জেলার ঠনঠনিয়াপাড়া নামক স্থানে পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর আক্রমণের উদ্দেশ্যে মুক্তিবাহিনী অগ্রসর হয়। কোম্পানী দু'টি কলামে বিভক্ত হয়ে একটি কলাম সম্মুখভাগ আক্রমণের জন্য মেজর নজমুল হকের নেতৃত্বে এবং অপর কলাম সুবেদার মেজর এ. রবের নেতৃত্বে বিরল-ঠনঠনিয়া সড়কের ১৫০ গজ বামে 'কাট অফ' পার্টি হিসেবে ডিফেন্স নেয়।
 
  • যুগোশ্লাভ পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব আর কারো নয়, পাকিস্তান সরকারের। পাকিস্তান সরকারের কার্যকলাপের দরুন আজ প্রায় ৬০ লাখ বাঙালি ভারতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতরভাবে উদ্বাস্তু হিসেবে জীবনযাপন করছে।

  • ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন।

  • ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ওয়াশিংন প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিদান ও বাংলাদেশে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানে উপনীত হবার লক্ষ্য পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূদের প্রতি আহবান জানান।

  • পূর্ব পাকিস্তান সফররত ৩ সদস্যের বৃটিশ পার্লামেন্টারী দলের সদস্য মিঃ জেমস টিন বলেন, 'বৃটিশ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সঙ্গে দেশের অবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ভারতের একতরফা প্রচারের কারণেই বিদেশী পত্রিকায় সঠিক খবর প্রকাশিত হচ্ছে না।'

  • দলের আরেক সদস্য মিসেস নাইট বলেন, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুষ্কৃতকারী দমনে অত্যন্ত দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে এই নির্মমতার দরকার ছিল।'

  • পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেন, "ভারতীয় সেনাবাহিনীর আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বিনা উস্কানিতে মর্টার ও মেশিন গানের গোলাবর্ষণ করে অসংখ্য নিরস্ত্র বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। কুমিল্লা, যশোর, রংপুর, রাজশাহীর সীমান্তবর্তী এলাকায় এসব ঘটনা নিয়মিত ঘটছে।"
 
  • এদিন ঘোষণা করা হয়- আগামী ২৮ জুন (১৯৭১) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন ইয়াহিয়া। স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে অপপ্রচার ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, তিনি বেসরকারি সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিতে পারেন। মুক্তিকামীরা এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়নি, কেননা রক্ত দিয়ে তারা জানতে পেরেছিল সরকার গঠনকে ঠেকানোর জন্যেই রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করেছিল পাক বাহিনী।
  •  
 
  • এদেশের মুক্তিকামীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্যে ৩ সদসের ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি দল আসে বাংলাদেশে। সফরকারী দলের সদস্য মিঃ জেমস টিন ১৭ জুন মন্তব্য করেন যে, ‘ব্রিটিশ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সঙ্গে দেশের অবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। .... একতরফা প্রচারের কারণেই বিদেশী পত্রিকায় সঠিক খবর প্রকাশিত হচ্ছে না।’ দলের অন্যান্য সদস্যরা ছিল মিসেস জেল নাইট ও জেমস কিল কেডার। এদেশবাসীর মুক্তিসংগ্রামকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করে তারা বলে যে, ‘উদ্বাস্থদের প্রত্যাবর্তন ও রাজনৈতিক সমালোচনার মাধ্যমেই উদ্ভুত পরিসি'তির সমাধান সম্ভব।’ 


  • চা বাগানের ব্রিটিশ নাগরিক জেমস বয়েড নিহত হয়েছিল পাক সেনাদের হাতে। কিন' ঘাতকরা তাদের জানায়, তাকে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধারা ধরে নিয়ে গেছে। পরোক্ষভাবে পাক বাহিনীকে সমর্থন দিয়ে দলের সদস্যা মিসেস নাইট বলে যে, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী দুষ্কৃতকারী দমনে অত্যন্ত দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে এই নির্মমতার দরকার ছিল।’ মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র প্রতিরোধকে অস্বীকার করার অপপ্রয়াস চালায় তারা।
     
 
  • হত্যা, সম্ভ্রমহরণ আর ধ্বংসযজ্ঞের অন্যতম সহায়ক ছিল ধর্মব্যবসায়ী জামাত। ১৭ জুন জামাত নেতা মাওলানা আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বগুড়ার কাহালু থানার শান্তিকমিটির সভায় জামাত নেতা অপপ্রচারে কান না দিয়ে আওয়ামী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ধ্বংসের ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার আহবান জানায়। জামাত নেতার সঙ্গে একই সুরে কথা বলে আহমদ আইয়ুবীসহ আরো ক’জন পাক বাহিনীর দোসর।