19 june in 1971
- ধর্মের নামে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের উপর কি পরিমাণ অত্যাচার করা হয়েছে তা বর্ণনাতীত। ঘাতকদের কাছে মুক্তিযোদ্ধরা ছিল দেশদ্রোহী।
- লে. জেনারেল টিক্কা খান ১৯ জুন গভর্নরদের সম্মেলন শেষে ঢাকা ফেরার পথে করাচী বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের জানান, পূর্ব-পাকিস্তানের অবস্থা তিনি স্বাভাবিক করে এনেছেন।
- মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিশ্বব্যাপী গণসমর্থনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান সরকার সিদ্ধান্ত নেয় গণহত্যাকে চাপা দেয়ার জন্যে জনমত গঠনের। ১৯ জুন টিক্কা খান জানান, .....প্রচারকার্য চালানোর জন্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিডিপি সহ-সভাপতি মাহমুদ আলী, বিচারপতি নূরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. সাজ্জাদ হোসেন বিদেশ সফরে যাবেন।’
- নিপীড়িত বঞ্চিত শ্রমিকরা এ সময় নিজেদের মুক্তির জন্যে শামিল হয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। ফলে বন্ধ হয়েছিল মিল-কারখানা। ১৯ জুন পূর্ব-পাকিস্তান ফেডারেশন অব লেবারের সহ-সভাপতি এসএম সোলায়মান নির্দেশ দেয় শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে। তার এই আহবান কোনো কাজে লাগেনি। কেননা স্বাধীনতা সংগ্রামে নিয়োজিত শ্রমিকরা তখন লড়াইয়ের মাঠে।
- এদিন দৈনিক আজাদ প্রচার করে রাজশাহীতে অস্ত্র উদ্ধারের সংবাদ। এ অস্ত্র কেড়ে নেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে। পুরো রাজশাহী তখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞে। আর এই ধ্বংসযজ্ঞের অন্যতম নেতা ছিল তথাকথিত শান্তিকমিটির নেতা আয়েনউদ্দিন। পাক বাহিনী ও তথাকথিত শান্তিকমিটির সংঘবদ্ধ তৎপরতায় এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহীতে সাময়িকভাবে পিছু হটে। আর আয়েনউদ্দীন তার বীরত্বের কাহিনী প্রচার করে বলে যে, ‘দুষ্কৃতকারীরা প্রচার করেছে রাজশাহী ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন' এ প্রচারণা প্রচারণাই, সঠিক নয়। রাজশাহী সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।’
- কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধারা মন্দভাগের কাছে পাকবাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্যকে এ্যামবুশ করে। এতে পাকবাহিনীর ৯ জন নিহত হয় এবং বাকী সেনারা মন্দভাগ গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।
- মুক্তিবাহিনী চৌদ্দগ্রাম ঘাঁটির ওপর পাকবাহিনীর দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য লাকসাম ও ফেনীর দিক থেকে প্রবল আক্রমণ চালায়। সারাদিন ব্যাপী যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা চৌদ্দগ্রাম ঘাঁটি পরিত্যাগ করে। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ২০০ জন হতাহত হয়। অপরদিকে ২জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন ও ৪ জন আহত হয়।
- চট্টগ্রামে চাঁদগাজী মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটির ওপর পাকবাহিনীর হামলা চালায়। দ'টি পদাতিক বাহিনীর ব্যাটালিয়ন পিছন দিক থেকে, মুহুরী নদী দিয়ে স্পীডবোটযোগে একটি কোম্পানী ও পাকিস্তানিদের রিয়ার হেড কোয়ার্টার থেকে আরেক দল আর্টিলারি, মর্টার ও অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের সাহায্যে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী ক্ষতি স্বীকার করলেও পাকসেনাদের ১৫০ জন নিহত ও অনেক আহত হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের চাঁদগাজী অবস্থান ত্যাগ করে পিছু হটে এবং পাকহানাদাররা চাঁদগাজী দখল করে নেয়।
- মুক্তিবাহিনীর বড়পুঞ্জি সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রবের নেতৃত্বে এক কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানায় পাকবাহিনীর সীমান্ত ঘাঁটি লাঠিটিলা আক্রমণ করে। তুমুল যুদ্ধের পর লাঠিটিলা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। এ যুদ্ধে ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। অপরদিকে পাকসেনাবাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের একজন হাবিলদার ও একজন সেপাই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
- ঢাকার সামরিক গভর্নর লেঃ জেনারেল টিক্কা খান করাচীতে বলেন, পাকিস্তান জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল খাঁটি পাকিস্তানি উদ্বাস্তুকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) ধ্বংসাত্মক কাজের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনের চারটি প্রধান সেতুর ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সেতুগুলো মেরামত ও পুনঃনির্মাণের কাজ শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ আবার চালু হবে।
- পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামের আমীর গোলাম আজম রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করে 'পূর্ব পাকিস্তান' প্রসঙ্গে পরামর্শ দেন।
- গোলাম আজম রাওয়ালপিন্ডিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পাকিস্তান শুধু টিকেই থাকবে না, শক্তিশালীও হবে। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করার বিকল্প কিছু ছিল না।
- ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম আসানসোলে এক জনসভায় বলেন, বাঙালি শরণার্থীরা অবরুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের নয়, শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরতে আগ্রহী।
- ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাংলাদেশের শরণার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯ লাখ ২৩ হাজার ৪শ' ৩৯ জন।