Tuesday, June 15, 2010

15 june in 1971

  • ১৯৭১এ পাক সরকার এদেশে গণহত্যার পাশাপাশি প্রকাশনা ও প্রচারণার ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। ১৫ জুন সামরিক কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ পুস্তকের তালিকা প্রকাশ করে। যে সব বই এ দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করতে পারে বলে সামরিক জান্তা মনে করেছিল সেগুলো ছিল এই তালিকায়।
    এ দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সংগ্রামে ছিন্নভিন্ন পাকিস্তানপন'ী রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমাগত চেষ্টা চালাতে থাকে জোটবদ্ধ হতে। মুসলিম লীগ তখন বিভক্ত ছিল ৩ ভাগে। ১৫ জুন কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান দৌলতানা দলীয় কর্মীদেরকে দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে দুষ্কৃতকারী দমনের নির্দেশ দেন।
     
  • ১৫ জুন আবারো সরকারিভাবে বলা হয় একটি পাকিস্তানিও সীমান্ত অতিক্রম করছে না, করলে আমাদের নজরে পড়ত।
    ১৯৭১এ পাক বাহিনী ঘাতক শান্তিকমিটির সহায়তায় মেতে উঠেছিল নারীর সম্ভ্রমহানিতে। এ বিষয়ে বিশ্ব জনমত বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করলে ১৪ জুন সরকারিভাবে বলা হয়, পলাতক স্বামীদের স্ত্রীরা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। পূর্ব-পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর কুখ্যাত টিক্কা খান গভর্নর সম্মেলনে নিজের সফলতা বর্ণনা করে এ সময় বলেন, আমাকে পাঠানো হয়েছে সমাজবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খতম করার জন্যে। আমি তা করেছি। তিনি আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট যে কোনোদিন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন।
     
  • এ দেশীয় দালালরা এ সময় পত্র-পত্রিকায় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতে থাকে। ১৫ জুন দৈনিক পূর্বদেশের ‘অভিমত’ কলামে মাহুতটুলির জনৈক রফিক ও শফিক লেখে- ‘সমাজ বিরোধীদের রুখতে হবে।’
     
  • শান্তিকমিটি এ সময় তাদের গ্রামে গ্রামে অত্যাচার-নারী অপহরণের কাজ আরো ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে গঠন করে কথিত গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। ১৫ জুন মুন্সিগঞ্জের দালালরা যোগ দেয় এই কথিত প্রতিরক্ষা বাহিনীতে।সুনামগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর ধরমপাশা ঘাঁটির ওপর দু‘হাজার পাক আর্মী ও মিলিশিয়ার একটি দল বারহাট্টা থানাধীন সিংধা-ধরমপাশা রাস্তা ধরে, আরেক দল কংস নদীর পথে ও অন্য একদল মোহনগঞ্জ-ধরমপাশা রাস্তা ধরে সম্মিলিতভাবে ত্রিধারায় আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে পাক বাহিনীর একজন মেজরসহ ২০ জন সৈন্য নিহত হয়। অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই শহীদ হন। এ যুদ্ধের পর পাকবাহিনী ধরমপাশা সদর দখল করে নেয় এবং নিরীহ মানুষদের ওপর নিপীড়ন, নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও নারী নির্যাতন করে। পাক বর্বররা ধরমপাশা বাজার পুড়িয়ে দেয়।
  • সিলেট শাহাজীবাজারের কাছে রেল সেতুতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনা বোঝাই একটি ট্রেনকে এ্যামবুশ করে। এতে ১শ‘৫০ জন পাকসেনা নিহত ও ট্রেনটি ধ্বংস হয়।
  • রংপুরের ভুরুঙ্গামারীতে মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনী মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পাকবাহিনীর বিপুল ক্ষতি স্বীকার করে।
  • ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ এ. মার্কোস ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর এক পত্রের জবাবে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিবাদের ফলে সেখানকার বাঙালি জনগণের দুঃখ-দুর্দশায় ফিলিপাইন সরকার ও জনগণ গভীরভাবে মর্মাহত।
  • বৃটিশ পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের হলেন মিসেস জিল নাইট, জেমস এ কিলফেডার ও জেমস টিন।
  • পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পাকিস্তানের মনোভাব ব্যক্ত করতে বিদেশী রাষ্ট্র সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তাকে অনুরোধ করেছেন।
    তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থায় তার দেশত্যাগ করা উচিৎ নয়, কিন্তু যেখানে প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করেন তখন তা বিবেচনা করা তার কর্তব্য।

  • সামরিক কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ পুস্তকের একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছেঃ আবদুল জলিলের যুগসঙ্গীত, শংকর প্রসাদ ঘোষ ও অরুণ দাশগুপ্তের অভিযাত্রী, পূর্ববঙ্গে লীগ সরকারের এক বছর, যাযাবরের ঝিলাম নদীর তীরে, প্রবোধ কুমার সান্যালের হাসুবানু, নূরে আলম সিদ্দিকীর রক্তাক্ত পোত, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, মুজাহিদের আলাদা হওয়াই মুক্তির পথ।
  • পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর টিক্কা খান গভর্নর সম্মেলনে নিজের সফলতা বর্ণনা করে বলেন, আমাকে পাঠানো হয়েছে সমাজবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খতম করার জন্য। আমি তা করেছি। প্রেসিডেন্ট যে কোনোদিন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন।