Saturday, June 19, 2010

18 june in 1971


  • লেঃ হুমায়ুনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদল কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে পাকসেনাদের সাইদাবাদ (কামান ঘাঁটি) অবস্থানে পিছন দিক থেকে অনুপ্রবেশ করে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। কয়েক ঘন্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা তিনটি জঙ্গী বিমানের সহায়তায় পাল্টা আক্রমণ জোরদার করে। আক্রমণ শেষে মুক্তিযোদ্ধাদল গ্রামের গোপন পথে মেঘনার দিকে পশ্চাদপসরণ করে। এ যুদ্ধে ৫০/৬০ জন পাকসেনা হতাহত হয় ও তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।


  • কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনীর কৈখোলা অবস্থানের ওপর পাকসেনারা গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্যে প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে কৈখোলা পাকসেনাদের দখলে চলে যায়। রাতে মেজর সালেক চৌধুরীর নেতৃত্বে চতুর্থ বেঙ্গলের 'এ' কোম্পানী কৈখোলায় অবস্থানরত পাকসেনাদের আক্রমণ করে। এছাড়া হাবিলদার সালামের প্লাটুন শিবপুরের দিক থেকে এবং সুবেদার আব্দুর হক ভুঁইয়ার প্লাটুন দক্ষিণ দিক থেকে শত্রুসেনাদের অবস্থানের ভিতর অনুপ্রবেশ করে। দু'ঘন্টা ব্যাপী তীব্র যু্দ্ধের পর পাকসেনারা কৈখোলা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে এবং মুক্তিবাহিনী কৈখোলায় তাঁদের দখল পুনঃস্থাপন করে। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন জেসিওসহ ৩১ জন সৈন্য হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম দখল করে।


  • মিয়াবাজারের দক্ষিণে মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন যোদ্ধা পাকসেনাদের দু‘টি বাংকারের ওপর আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।


  • কুমিল্লায় একদল মুক্তিযোদ্ধা খিলা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পাকসেনাদের একটি জীপকে এ্যামবুশ করে। এ অভিযানে ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।


  • দিনাজপুর জেলার ঠনঠনিয়াপাড়ায় পাক অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী বড় রকমের হামলা চালায়। আধ ঘন্টা ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধের পর পাক সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ঠনঠনিয়া মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ১৫ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। অপরদিকে ১জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় ও ২ জন আহত হয়।


  • মুক্তিবাহিনীর লেঃ ইমামুজ্জামানের কোম্পানী বেলোনিয়ার চিতলিয়া অবস্থানের ওপর পাকিস্তান বাহিনী হেলিকপ্টারযোগে ব্যাপক হামলা চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা অন্যত্র সরে পড়ে।


  • বাগেরহাট সদরের কান্দাপাড়া বাজারে পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যার লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। এখানে পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররা ১৮ জন যুবক, ৩ জন বৃদ্ধ ও ২জন শিশুকে জবাই করে মাথাগুলো বিচ্ছিন্ন করে লাশের বুকের ওপর রেখে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখে।


  • মৌলভীবাজারে পাকবাহিনীর জুড়ি অবস্থানের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর ২৫ জন সিপাই নিহত হয় এবং ৯ জন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়।


  • পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান  সকল দেশত্যাগী পাকিস্তানীর প্রতি স্বদেশ ফিরে আসার আবেদন জানান।

  • প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী, বিচারপতি নূরুল ইসলাম, ডেমোক্রাটিক পার্টির সহ-সভাপতি মাহমুদ আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ কাজী দীন মোহাম্মদ 'পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি' হিসেবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে রাওয়ালপিন্ডিতে সাক্ষাৎ করেন।

  • সারাদেশে পাক বাহিনীর এদেশীয় দালালদের সংগঠিত করতে সবচেয়ে সক্রিয় ছিল অধ্যাপক গো’ আযম। ১৮ জুন সে গণহত্যাকে আরো তীব্রতর করার ইন্ধন যোগাতে পশ্চিম পাকিস্তান সফরে যায়। লাহোর বিমানবন্দরে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সে বলেছিল, ‘কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে? ক্ষমতা গ্রহণের জন্যে দরকার একটি জাতীয় পরিষদ। আমাকে বলুন-তো দেশে জাতীয় পরিষদ আছে কি? কোনোমতেই বেআইনি ঘোষিত ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে ক্ষমতা দেয়া যায় না।’ দেশের পরিসি'তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে সে আরো বলেছিল, ‘দুষ্কৃতকারীরা এখনো ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত রয়েছে। নকশালী ও কমিউনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত এসব দুষ্কৃতকারীরা জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খল অবস্থা দীর্ঘায়িত করতে চায়।

  • আরো একজন পাক বাহিনীর সহযোগী মরহুম খান এ. সবুর। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ‘পিপিআর’ অধ্যাদেশের জোরে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় সে। ১৮ জুন এক বিবৃতিতে সে বলেছিল, ‘বিদেশীরা আমাদের জনগণের একটি অংশকে স্বর্গভোগের আশা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করতে প্রলুব্ধ করেছে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতাকারী এই খান এ. সবুরকে পরে জাতীয় গোরস্থানে সমাহিত করে উপহাস করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের।

  • ১৮ জুন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদ উল হক চৌধুরী, পিডিপি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী, বিচারপতি নুরুল ইসলাম সাক্ষাৎ করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে। এদের সঙ্গে আরো ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলার ড. সাজ্জাদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কাজী দীন মুহাম্মদ। 
 
  • পাকিস্তানিদের মনোরঞ্জন করে ফিরে আসা ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতির নেতা সাত্তার কারাওয়াদিয়ার প্রতিনিধিদল এ দিন জানায়, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ‘যে সব পশ্চিম-পাকিস্তানী শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী চলে গেছে তাদের পুনরায় ফিরে আসার অনুরোধ জানানো।’ 
 
  • পাক সামরিক সরকার স্বাধীনতার সপক্ষের সকল কর্মচারীকে ব্যাংক, সরকারি অফিস থেকে ছাঁটাই করে। কিন্তু ১৮ জুন রেডিও পাকিস্তান সরকারি মুখপাত্রের বরাত দিয়ে তা অস্বীকার করে। একই সঙ্গে প্রচার করে উদ্বাস্থ ফিরে আসার ভুয়া খবর।